তোমাদের আশেপাশে অনেক মানুষ বসবাস করেন। কেউ পরিচিত কেউবা অপরিচিত। এ যাবৎকালে তোমার দেখা সবচেয়ে ভালো/আদর্শ মানুষ সম্পর্কে লেখো।
নাম- পরিচয়- বক্তব্য
|
** এই পৃষ্ঠায় জায়গা না হলে একটি আলাদা কাগজে লিখে কাগজটি বইয়ের পৃষ্ঠার এক পাশে আঠা দিয়ে যুক্ত করতে পারি/খাতায় লিখতে পারি।
জাতক শব্দটি 'জাত' শব্দ থেকে এসেছে। জাত শব্দের অর্থ হলো জন্ম, উৎপন্ন, উদ্ভুত ইত্যাদি। যিনি জাত বা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাকে বলা হয় 'জাতক'। বৌদ্ধ সাহিত্যে গৌতম বুদ্ধের অতীত জীবন কাহিনিগুলো 'জাতক' নামে পরিচিত। বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের ধর্মোপদেশ দেওয়ার সময় ঘটনা প্রসঙ্গে উপদেশ দিতে গিয়ে তাঁর অতীত জন্মের কাহিনি বর্ণনা করতেন। গৌতম বুদ্ধ বোধিজ্ঞান লাভ করার জন্য ৫৫০ বার বিভিন্ন প্রাণী হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। এসব জন্মে তিনি কখনো মানুষ, কখনো পশুপাখি, কখনো দেবতারূপে জন্মগ্রহণ করেন। বুদ্ধের এ অবস্থাকে বলা হয় বোধিসত্ত্ব। বোধিসত্ত্বগণ সাধারণত বোধিজ্ঞান লাভের জন্য সাধনা করে থাকেন। বোধিসত্ত্ব অবস্থায় দান, শীল, নৈষ্ক্রম্য, বীর্য, ক্ষান্তি, মৈত্রী, সত্য, ভাবনা, অধিষ্ঠান ও উপেক্ষা এই দশ প্রকার পারমিতা চর্চা করে চরিত্রের চরম উৎকর্ষ সাধন করেন। এর ফলে শেষ জন্মে পূর্ণ প্রজ্ঞাসম্পন্ন হয়ে বোধিজ্ঞান লাভ করেন এবং সম্যক সম্বুদ্ধ নামে অভিহিত হন। জাতক কাহিনিগুলোতে বোধিসত্ত্ব কোনোটিতে প্রধান চরিত্রে, কোনোটিতে পার্শ্বচরিত্রে কোনোটিতে গৌণ চরিত্রে আবার কোনোটিতে তিনি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছেন। তবে অধিকাংশ জাতকে তাঁকে মুখ্য ভূমিকায় দেখা যায়।
জাতক কাহিনিগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, গল্প বলার মাধ্যমে শ্রোতাদের সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করা। গল্পের মাধ্যমে নৈতিক ও মানসিক গুণাবলির বিকাশ সাধন জাতক কাহিনিগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মানুষ গল্প শুনতে ভালোবাসে। গল্পের মাধ্যমে বর্ণিত বিষয় মানুষের অন্তরের গভীরে রেখাপাত করে। বুদ্ধ ধর্মদেশনার সময় প্রসঙ্গক্রমে তাঁর অতীত জীবনের গল্পগুলোর মাধ্যমে নৈতিক শিক্ষা ও মানবিক গুণাবলি প্রকাশ করতেন। এর প্রভাবে তাঁর শিষ্যরা আদর্শ জীবন গঠনে উদ্বুদ্ধ হতেন। উল্লেখ্য, জাতক কাহিনিগুলোতে অতিপ্রাকৃতের কিছুটা ছাপ থাকলেও জাতকের ঘটনাগুলো একান্তভাবে জীবনসম্পৃক্ত। জাতকের কোনো চরিত্রে বোধিসত্ত্বকে মানবিক চরিত্রের পূর্ণপ্রতীক রূপে প্রতীয়মান হয়। তিনি কোথাও অতি মানবরূপে চিত্রায়িত হননি। জাতকে কোথাও অবান্তর বিষয়ের অবতারণা করা হয়নি।
জাতকের গল্পগুলোর একটি বিশেষ গঠন আছে। প্রতিটি জাতকের গল্পে তিনটি অংশ থাকে। প্রথম অংশে বুদ্ধ যে ঘটনা বা প্রসঙ্গে জাতকটি বলেছেন, তার পরিচয় দেওয়া হয় এটিকে বলা হয় প্রত্যুৎপন্ন বস্তু। দ্বিতীয় অংশে থাকে মূল গল্প বা জাতকের কাহিনি, যাকে বলা হয় অতীতবস্তু। তৃতীয় অংশে দেওয়া হয় ঘটনায় অংশগ্রহণকারীদের বাস্তব পরিচয়, যার নাম সমবধান। এভাবে বুদ্ধের মুখ থেকে তাঁর শিষ্য বা সমসাময়িক ব্যক্তিদের অতীত জন্মের কাহিনিও জানা যায়।
জাতকের গুরুত্ব বিভিন্নমুখী। জাতক সাহিত্য পাঠে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, শিল্পকলা, প্রাচীন প্রসিদ্ধ জনপদ ইত্যাদি বিষয়ে জানা যায়। বিশ্বসাহিত্য ভান্ডারে গল্প, উপন্যাস, নাটক, উপাখ্যান, ছোটগল্প প্রভৃতি রচনার উৎস হিসেবেও জাতকের ভূমিকা আছে বলে পণ্ডিতেরা মনে করেন। এজন্য জাতককে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জাতক প্রাচীন ইতিহাসের এক মূল্যবান ভান্ডার। বুদ্ধযুগের সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, ধর্মদর্শন জানার জন্য জাতক গুরুত্বপূর্ণ।
Read more